নোয়াখালীতে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রায় ৯ কোটি টাকার ভুয়া ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রামের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-১১ সদস্যরা তাকে আটক করে। পরদিন রবিবার আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার নুর উল্যাহর ছেলে আলমগীর দীর্ঘদিন ধরে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের নোয়াখালী দত্তেরহাট ও সেনবাগ দুই শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। দুদকের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, তিনি দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের নামে-বেনামে ভুয়া ঋণ অনুমোদন করে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন।

দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৫ এবং ২০২০ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত নোয়াখালী শাখায় দায়িত্ব পালনকালে তিনটি কাল্পনিক ঋণগ্রহীতার নামে প্রায় ৭ কোটি টাকা তুলে নেন আলমগীর। পরে সেনবাগ শাখায় দায়িত্ব নিয়ে ২০১৫ থেকে ২০২০ এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আরও ৮৯টি ভুয়া ঋণ দেখিয়ে প্রায় ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। অধিকাংশ ঋণগ্রহীতার অস্তিত্ব ব্যাংকের রেকর্ড ছাড়াও বাস্তবেও পাওয়া যায়নি।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট গত ২০ অক্টোবর ব্যাংকের নথিপত্র জব্দ করে তদন্ত শুরু করলে এসব অনিয়ম স্পষ্ট হয়। তদন্ত দল জানায়, আলমগীর গ্রাহকদের অজান্তেই ভুয়া এনআইডি, মোবাইল নম্বর ও জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে নামে-বেনামে ঋণ অনুমোদন করতেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা কমান্ড্যান্ট মো. সুজন মিয়া বলেন, “আমাদের সদস্যদের নামেও ভুয়া ঋণ দেখিয়ে প্রায় ৯ কোটি টাকার মতো অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

দুদকের নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, “দুটি পৃথক মামলায় আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

ব্যাংক খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নজরদারির ঘাটতি নিয়ে এই ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।