খানাখন্দ, কাদা-পানি ও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পিরোজপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে, ডুবে যায় বড় বড় গর্ত। এতে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ও পরিবহন চালক-পথচারীরা পড়ছেন মারাত্মক ভোগান্তিতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালে ঢোকার প্রধান রাস্তা ও অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো ঢেকে থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। বড় যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, এমনকি মোটরসাইকেল পর্যন্ত এসব গর্তে আটকে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক যাত্রীকেও বাস থেকে নামার সময় কাদা-পানিতে পা ডুবিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
২০০৬ সালে পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কের পাশে মাছিমপুর এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (LGED) এ টার্মিনাল নির্মাণ করে। শুরুতে এখানে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে পড়েছে একেবারে অপ্রতুল।
বর্তমানে প্রতিদিন অন্তত ১৪টি রুটে ছয় শতাধিক বাস ও মিনিবাস যাতায়াত করে। এতে প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী এ টার্মিনাল ব্যবহার করছেন। কিন্তু ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি বাস অনুমতি নিয়ে টার্মিনালে ঢুকছে, যার ফলে বাড়ছে চাপ, তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা।
স্থানীয় যাত্রী সজল শেখ বলেন,পিরোজপুর থেকে বাইরে যেতে হলে এই টার্মিনাল ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু এখানকার অবস্থা এতটাই খারাপ যে নেমেই পা ডুবিয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে চলতে হয়। ছোট বাচ্চা বা বৃদ্ধদের নিয়ে যাতায়াত এক কথায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বাসচালক আবুল হোসেন বলেন,
এখন এই টার্মিনাল ব্যবহার করাই কষ্টকর। অনেক সময় বাস গর্তে আটকে যায়, তখন অন্য বাস দিয়ে ঠেলে বের করতে হয়। সময়, তেল, শ্রম—সবই নষ্ট হয়। দ্রুত যদি সংস্কার না হয়, তাহলে বাস রাখা বন্ধ করে দিতে হবে।
শ্রমিক মাহাতাব আলী বলেন,
এই টার্মিনালে ঢুকতেই ভয় লাগে। বাসের চাকায় সমস্যা হয়, নিচের পাতি ও ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ঠিক করতে সময় লাগে, ইনকাম বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের কষ্টের কথা কেউ বুঝে না।
পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা অভিযোগ করেছেন, অর্থের বিনিময়ে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে অতিরিক্ত সংখ্যক বাসের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এতে করে টার্মিনালে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি বাস, যানজটের সৃষ্টি হয় শহরের প্রবেশমুখেই।
পরিবহন মালিক আব্দুস সালাম খান বলেন,
টার্মিনালটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত সংস্কার না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যাত্রী, চালক, মালিক—সবাই দুর্ভোগে রয়েছি।
২০০৬ সালে নির্মিত এই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ১৯ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের সংস্কার হয়নি। কয়েক বছর ধরে গর্ত ও ভাঙাচোরা অবস্থার মধ্যেই চলছে কার্যক্রম।
পিরোজপুর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন,
আমরা বারবার পৌরসভাকে অনুরোধ করেছি গর্তগুলো ভরাট করার জন্য। বর্ষাকালে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে পানি ভেঙে যেতে হয়, এটা খুবই দুঃখজনক।
পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল দত্ত বণিক বলেন,
গত বছর আমরা কিছুটা মেরামতের কাজ করেছিলাম। পাশাপাশি কয়েকটি প্রকল্পের স্কিম প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুতই মেরামতের কাজ শুরু হবে।
তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, শুধু খানাখন্দ ভরাট করেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। টার্মিনালকে আধুনিকায়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাস পার্কিংয়ের জন্য আলাদা জোন এবং অতিরিক্ত যান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এমনকি বিকল্প নতুন টার্মিনাল নির্মাণও জরুরি হয়ে পড়েছে।
যাত্রী, শ্রমিক ও পরিবহন মালিকরা বলছেন,
সড়ক ব্যবস্থার এমন দুরবস্থা পিরোজপুরের জন্য লজ্জাজনক। দ্রুত সংস্কার না হলে জনদুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে। প্রশাসন যেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়।