ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের সুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) আয়োজিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব। বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার পর আশপাশের গ্রাম থেকে হাজারো মানুষ অংশ নেন। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খায়রুল ইসলাম উৎসবের উদ্বোধন করেন।
১৯৫১-৫২ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে এই এলাকায় জলকপাট নির্মাণ করা হয়। সেচের সুবিধার পাশাপাশি বাঁধের ৫০ একর এলাকা মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর পানি ছেড়ে দেওয়ার সময় মৎস্য অধিদফতর পোনা মাছ অবমুক্ত করে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ তা দেখভাল করে।
উৎসবের দিন ভোর থেকেই হাজারো মানুষ জাল, পলো ও মাছ রাখার পাত্র নিয়ে বাঁধ এলাকায় জড়ো হন। কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় মাছ ধরতে ব্যস্ত থাকেন। তবে মৎস্যশিকারিরা অভিযোগ করেন, কাঙ্ক্ষিত দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে রাতভর জাল ফেলার পরও খালি হাতে ফিরছেন।
স্থানীয় রমজান আলী বলেন,এই উৎসব আর আগের মতো নেই। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা চারপাশে ঘের বসিয়ে মাছ আটকে রেখেছে। সাধারণ মানুষ কিছুই ধরতে পারছে না।
খোকন আলী অভিযোগ করেন,মাছগুলো ঘেরে আটকে রাখা হয়েছে। এখানে মৎস্য উৎসবের চেয়ে তামাশা বেশি। আমরা দূর থেকে এসে বেকার সময় নষ্ট করছি।
অন্য একজন, রফিকুল ইসলাম, বলেন,উৎসবটি এখন ব্যক্তিগত উৎসবে পরিণত হয়েছে। সামাজিকভাবে সমাধান দরকার, নয়তো একদিন এটি হারিয়ে যাবে।
মৎস্য কর্মকর্তা আরাফাত উদ্দিন আহম্মেদ জানান,প্রতিবছর বাঁধের পানিতে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কিছু অসাধু ব্যক্তি পোনামাছ নিধনে রিং জাল বসিয়ে রাখে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপরও যদি মাছ না পাওয়া যায়, আমরা কিছু করতে পারি না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী যাকারিয়া বলেন,এই প্রকল্প স্থানীয়ভাবে মাছের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে কেউ কেন খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে, সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাই।
উৎসবটি ঐতিহ্যবাহী হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাছের ঘাটতি, ঘের ও নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার নিয়ে মানুষের হতাশা বেড়ে গেছে।