দেশের ব্যস্ততম সড়ক ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন পথচারীদের মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। কুমিল্লা অংশে নির্মিত ৫৪টি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে প্রতিদিন শত শত মানুষ দ্রুতগতির গাড়ির সামনে দিয়েই পার হচ্ছেন রাস্তা। এতে বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ বাস স্টেশনে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটি পড়ে আছে অযত্নে। কেউ ব্যবহার করছেন না। ব্রিজের নিচ দিয়ে, এমনকি মহাসড়কের ডিভাইডারের গ্রিল ভেঙে মানুষ পার হচ্ছেন এক পাশ থেকে অন্য পাশে। শিশু, বৃদ্ধ, নারী, কলেজছাত্র—সবাই জীবনকে বাজি রেখে এই ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটছেন প্রতিদিন।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪৬৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৮৪ জন নিহত এবং ৫০৯ জন পঙ্গু হয়েছেন। এদের অনেকেই রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন।
পথচারী আহমেদ সুমন, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, বলেন, আসলে এটা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। সবাই রাস্তা দিয়েই পার হচ্ছে, তাই আমিও হেঁটে গেছি। জানি এটা বিপজ্জনক, তবু সময় বাঁচাতে এমন করি।
কলেজছাত্র তানভীর হোসেন বলেন, ব্রিজে উঠতে কষ্ট লাগে, তাই ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হই।
স্থানীয় সেলুন ব্যবসায়ী নয়ন মিয়া জানান, চোখের সামনে কতজনকে দেখি গাড়ি চাপা পড়তে। তবুও কেউ ব্রিজে ওঠে না। সবাই ভাবে, ‘আমার কিছু হবে না।’
সচেতন মহলের মতে, এই আচরণ পরিবর্তনে দরকার নিয়ম প্রয়োগ ও সচেতনতা।
কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির মাসউদ বলেন, আমরা একমাত্র জাতি যারা মৃত্যুর তোয়াক্কা না করেই মহাসড়ক পার হই। সরকার ব্রিজ দিয়েছে, এখন প্রয়োজন মানুষকে ব্যবহার শেখানো।
সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি শাহ আলমগীর খান বলেন, মানুষ যেমন অনীহা দেখাচ্ছে, প্রশাসনের পক্ষেও আছে উদাসীনতা। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করে মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্য করতে হবে।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. শাহিনুর আলম খান বলেন, মানুষকে সচেতন না হলে কোনো কিছুই কাজ করবে না। আমরা নিয়মিত অভিযান ও প্রচারণা চালাচ্ছি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা বারবার মাঝখানে লোহার গ্রিল বসাই, মানুষ আবার সেগুলো ভেঙে দেয়। ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করে দিয়েছি এখন ব্যবহার করা নাগরিকদের দায়িত্ব।
ব্যস্ত মহাসড়কে নিয়মভঙ্গের এই অভ্যাস না বদলালে, ফুটওভার ব্রিজের নিচে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।