নোয়াখালী সদর উপজেলার মাইজদী এলাকায় ছাত্রশিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মসজিদে অবরুদ্ধ থাকা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের যৌথবাহিনী রাত ৭টার দিকে নিরাপদে জেলা শহরে পৌঁছে দিয়েছে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) ‘দারসুল কোরআন’ নামে মসজিদে আয়োজিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলার প্রতিবাদে সংঘর্ষ শুরু হয়। আসরের নামাজ শেষে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের সময় বাইরে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়।

প্রথমদিকে অল্প সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হওয়ায় সেখানে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তিন ঘণ্টার বেশি সময় পর যৌথবাহিনীর নিরাপত্তায় মসজিদে অবস্থানরত ছাত্রশিবির কর্মীরা বাইরে আসতে সক্ষম হয় এবং নিরাপদে জেলা শহরে পৌঁছে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

মসজিদে অবরুদ্ধ ছাত্রশিবিরের সদস্য ইমরানুল হক বলেন, “সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় আমরা মসজিদ থেকে বের হয়ে নিরাপদে মাইজদীতে পৌঁছেছি। যাত্রাপথে বিএনপির সন্ত্রাসীরা আবারো গাড়ির বহরে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে। আমাদের অনেক মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে, তাই আমরা হেঁটে শহরে এসেছি। আহত ভাইদের মধ্যে একজনের চোখে গুরুতর আঘাত হয়েছে।”

নেওয়াজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন বাবুল বলেন, “আমরা সংঘাত চাইনি, তবে কিছু ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিবির নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। আমাদের ১৯ জন নেতাকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও নোয়াখালী শহর শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান আরমান জানান, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কোরআন ক্লাসে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন অস্ত্রসহ হামলা করেছে। এতে ৪৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমাদের মোটরসাইকেল ও মোবাইল চুরি হয়েছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।”

নোয়াখালী সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিফাত আনোয়ার বলেন, “আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে সেনা সদস্য পাঠাই। জেলা শহর থেকে দূর হওয়ায় পৌঁছাতে কিছুটা সময় লেগেছিল, তবে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অবরুদ্ধদের নিরাপদে উদ্ধার করে জেলা শহরে পৌঁছে দিয়েছি। সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করেছে।”

এ ঘটনায় স্থানীয় মানুষজন উদ্বিগ্ন থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় নেতাদের দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।