এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল মানেই অনেক পরিবারের স্বপ্ন পূরণের দিন। কারও চোখে আনন্দের জল, কেউবা ব্যর্থতার গ্লানিতে নুয়ে পড়েন। কিন্তু খুলনা বিভাগের ২০টি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এবারের ফলাফল ছিল একেবারে হতাশার—কারণ, এসব কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মতিন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
শুধু সংখ্যা নয়, এগুলো বাস্তব গল্প
যশোর বোর্ডের অধীনে খুলনা বিভাগের নানা প্রান্ত থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু হতবাক করে দেওয়া এই সংখ্যাগুলো যেন শিক্ষা ব্যবস্থার এক করুণ চিত্র এঁকে দিয়েছে।
খুলনার চিত্র:
এই বিভাগে পাসশূন্য কলেজের তালিকায় শুধু খুলনা জেলারই চারটি কলেজ রয়েছে।
- ডুমুরিয়া মডেল মহিলা কলেজ: ১ জন
- খুলনা হোম ইকোনমিক্স কলেজ: ১ জন
- কপিলমুনি সহচারী বিদ্যা মন্দির (পাইকগাছা): ৫ জন
- আদর্শ শিক্ষা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (তেরখাদা): ৮ জন
সবাই পরীক্ষা দিয়েছে, কিন্তু কেউই উত্তীর্ণ হয়নি।
বাকিগুলো? আরও হতবাক করা...
- মেহেরপুর: গাংনীর বিএন কলেজ – ১১ জন
- মাগুরা: ২টি কলেজ – মোট ১২ জন
- বাগেরহাট: শিংজর গোপালপুর কলেজ – ১৮ জন
- সাতক্ষীরা: ২টি কলেজ – ১১ জন
- কুষ্টিয়া: ৪ জন
- ঝিনাইদহ, যশোর, মোহাম্মদপুর – আরও কয়েকটি কলেজ, যেখানে অংশগ্রহণকারী ১০-২০ জন শিক্ষার্থীর কেউই পাস করেনি।
এই ফলাফলের মানে কী?
শিক্ষাবিদদের মতে, বিষয়টি শুধু শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতা নয়, বরং এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি, শিক্ষকের সংখ্যা, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মান, এবং প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতির প্রতিফলন।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর আব্দুল মতিন বলেন,
"শূন্য পাস করা কলেজগুলোর ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
আলোর খোঁজে অন্ধকারে...
এইচএসসি পাস না করতে পারা মানেই জীবনের সমাপ্তি নয়, তবে ২০টি কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস না করা মানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোথাও ভয়ংকর ফাঁক রয়ে গেছে।
এই ফাঁকটা ভরাট করতে এখন দরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ, স্বচ্ছতা এবং শিক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা।