চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে নির্মিত লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে-র কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ সাত বছর পরও শেষ না হওয়া এবং প্রত্যাশিত গাড়ির চলাচল কম হওয়ায় এর নির্মাণ ব্যয় তুলতে প্রায় ২২৫ বছরের বেশি সময় লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যে সড়কে চলতি বছর প্রতিদিন ৩৯ হাজার গাড়ি চলাচলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছিল, সেখানে গত ১০ মাসের হিসাবে গড়ে চলাচল করেছে মাত্র ৮ হাজার ১১৯টি গাড়ি। অর্থাৎ সম্ভাব্যতার তুলনায় চলাচল মাত্র ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ।

প্রকল্পের নির্ধারিত সময় ইতোমধ্যে তিন দফা বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন করা হয়েছে এবং ব্যয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। কাজের ৯১ শতাংশ শেষ হলেও সড়কের নিচে যানজট আগের মতোই, আর ওপরে এক্সপ্রেসওয়ে প্রায় ফাঁকা।

কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর এটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। গত ৩ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টোল আদায় শুরু হয়েছে। এটির নামকরণ করা হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম স্মরণে ‘শহীদ ওয়াসিম আকরাম এক্সপ্রেসওয়ে’।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হিসাব বলছে, টোলসহ উদ্বোধনের পর ১০ মাসে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গাড়ি চলেছে ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮টি। এই সময়ে টোল থেকে মোট আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা গড়ে দিনে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার বেশি।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার আয়ের মূল উৎস হলেও যাত্রীভিত্তিক বাস ও মালবাহী ট্রাকের ব্যবহার একেবারেই কম। ফলে এটি ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য বিলাসী সড়কেই পরিণত হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।

প্রকল্পের নকশায় ১৫টি র‍্যাম্প থাকলেও, নতুন সিডিএ বোর্ড ছয়টি নির্মাণ স্থগিত করেছে। বাকি ৯টির মধ্যে মাত্র ৪টির নির্মাণকাজ শেষ হলেও একটিও চালু হয়নি। ফলে অনেক এলাকার চালকদের এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় তারা নিচ দিয়ে চলাচল করাকেই শ্রেয় মনে করছেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষের মতে, "হাজার হাজার কোটি টাকার উড়ালসড়কে বর্তমানে যে পরিমাণ গাড়ি চলছে, এটাই আসল সমীক্ষা।" তিনি অভিযোগ করেন, সিডিএ কর্তৃপক্ষ তাদের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় অতিরিক্ত গাড়ি চলার তথ্য দেখিয়েছিল। তিনি এই অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানান।

প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান অবশ্য বলেন, কাজ পুরোপুরি শেষ হলে এবং র‍্যাম্পগুলো চালু হলে যান চলাচল প্রত্যাশা অনুযায়ী হবে।

ইএফ/