পর্যটননগরী কুয়াকাটায় ছুটির দিনে বেড়েছে পর্যটকের ভিড়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোভ্যানের দাপট। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
সাপ্তাহিক ছুটি ও বিশেষ দিনগুলোতে পর্যটকদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। তবে যানজট পরিস্থিতির পেছনে প্রধান দায় হিসেবে উঠে আসছে বাইরের এলাকা থেকে আগত ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলোর অনিয়ন্ত্রিত চলাচল।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট-সংলগ্ন চৌরাস্তায় দেখা যায়, অতিরিক্ত ইজিবাইক ও অটোভ্যানের চাপের কারণে মূল সড়কগুলোতে থেমে থেমে চলতে হচ্ছে যানবাহন ও পথচারীদের।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আলী হোসেন বলেন, “জিরো পয়েন্ট থেকে সৈকত পর্যন্ত মাত্র আধা কিলোমিটার রাস্তা, সেটা পার হতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লেগেছে। হেঁটেও দ্রুত যাওয়া সম্ভব নয়।”
এমন পরিস্থিতিতে পর্যটক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
স্থানীয় চালক ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাইরের চালকদের একটি বড় অংশ কোনো ধরনের লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই কুয়াকাটায় গাড়ি চালাচ্ছে। এতে শুধু যানজটই বাড়ছে না, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
স্থানীয় ইজিবাইকচালক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ্বাস বলেন, “কুয়াকাটায় নিয়মিত ৯০০টির মতো ব্যাটারিচালিত যান চলে। কিন্তু ছুটির দিনে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাইরের চালকরা কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই গাড়ি চালায়। আমাদের চালকরা নিয়ম মেনে চলে, প্রশিক্ষণ নেয়, অথচ বাইরের চালকদের কারণে বদনাম হচ্ছে আমাদের।”
যানজটের প্রভাব পড়ছে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়েও। সৈকতের আশপাশের হোটেল, রেস্তোরাঁ ও দোকানগুলোতে পর্যটকের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী সোহেল মাহমুদ বলেন, “পর্যটকরা সহজে চলাফেরা করতে না পারলে কুয়াকাটা তাদের কাছে আর আকর্ষণীয় মনে হবে না। এতে আমাদের ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।”
পর্যটন এলাকা হওয়া সত্ত্বেও কুয়াকাটায় নেই কোনো স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশের টিম। যা রয়েছে, তা অস্থায়ী ও পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “আমাদের এখানে কোনো স্থায়ী ট্রাফিক ইউনিট নেই। জেলা সদর থেকে মাঝে মাঝে একটি টিম আসে। বর্তমানে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট আছেন, আর ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি ইউনিট যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।”
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক বলেন, “ইতোমধ্যে ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলোকে পৌরসভার লাইসেন্সের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ চালক এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে না।”
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৮টি গাড়ি নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকেও এসব গাড়ি প্রবেশ করছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
পর্যটননগরী হিসেবে কুয়াকাটার সম্ভাবনা অনেক। তবে যানজটের মতো সমস্যাগুলো অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে। সুষ্ঠু নীতিমালা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও বাইরের যান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।