মাদারীপুরের শিবচরে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতুর কাজ দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি সেতুর অর্ধেক কাজও। এতে শিবচর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে শিবচরের চান্দেরচর বাজারের উত্তর পাশে ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় প্রকল্পটি থমকে যায়। ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় স্থানীয়রা গত বছরের আগস্টে কাজ বন্ধ করে দেন।
ফলে শিবচরের উমেদপুর, ভদ্রাসন ও কুতুবপুর ইউনিয়নের হাজারো মানুষকে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কৃষিপণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে, স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিপাকে। অস্থায়ীভাবে তৈরি করা অ্যাপ্রোচ সড়কটি এখন দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে।
“তিন বছর ধরে কষ্টে আছি”
স্থানীয় ভ্যানচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, “প্রায় তিন বছর ধরে এই কষ্টে আছি। বৃষ্টির সময় রাস্তা একেবারে কাদা হয়ে যায়। সেতুটি শেষ হলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো।”
ডিক্রিরচর গ্রামের বাসিন্দা মামুন ঢালী বলেন, “অ্যাপ্রোচ সড়ক পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা বেড়েছে। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় রডে মরিচা ধরে যাচ্ছে, ফলে ভবিষ্যতে সেতুর স্থায়িত্ব নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রশাসন ও এলজিইডির বক্তব্য
মাদারীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কীর্তনীয়া বলেন, “ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা সমাধানে কাজ চলছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুতই কাজ পুনরায় শুরু করা হবে।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জুয়েল আহম্মেদ জানান, “ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া কাজ শুরু করা হয়েছিল—যা বড় ভুল ছিল। বর্তমানে বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
উন্নয়নের প্রতীক্ষায় মানুষ
এলাকার মানুষ বলছেন, সেতুটি চালু হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে, বদলে যাবে তিন ইউনিয়নের অর্থনৈতিক চিত্র। কিন্তু খালের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মরিচাধরা রডের এই আধা-নির্মিত সেতুটি এখন শুধু প্রতিশ্রুতির স্মারক হয়ে আছে।
ইএফ/