জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের বড়মাঝিপাড়া গ্রামে বিরল ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে মাত্র ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু। সোমবার দুপুর থেকেই বাড়ির উঠানে শোকের বাতাস। পাশাপাশি রাখা দুই খাটিয়ায় শুয়ে আছেন সালেহা বেগম (৬৫) ও তাঁর মেয়ে বিলকিস বেগম (৩৮)। এর আগে রোববার রাতেই মারা গেছেন সালেহার নাতি তুহিন হোসাইন (২৫)।

বিলকিসের স্বামী ছানোয়ার হোসেন স্ত্রীর ও শাশুড়ির মরদেহের পাশে নির্বাক বসে ছিলেন। একই সময়ে বাড়ির পাশে চলছে দুটি কবর খোঁড়ার কাজ—একসঙ্গে মা-মেয়েকে দাফন করার জন্য।

গ্রামের মানুষ জানায়, কয়েকদিন ধরেই পরিবারটিতে নানা অসুস্থতা দেখা দিচ্ছিল। গত শনিবার বিলকিসের শাশুড়ি শেফালী বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে দেখতে গিয়ে বিলকিসও একই উপসর্গে আক্রান্ত হন এবং রোববার সকালে হাসপাতালেই ভর্তি হন। সেদিনই তাঁর মা সালেহা বেগমও অসুস্থ হয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি হন।

তবে চিকিৎসকদের দাবি—মা-মেয়ে দুজনই ডায়রিয়ায় নয়, বরং শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতায় মারা গেছেন। তাঁরা ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন না বলেও জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের দাবি—তারা সবাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

রোববার রাত ৮টার দিকে পরিবারের তরুণ সদস্য তুহিন ক্যান্সারজনিত জটিলতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সোমবার সকালে তাকে দাফন করা হয়। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর দুপুর পৌনে ১টায় সালেহা বেগমের মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর মাত্র ৩৫ মিনিট পর মারা যান বিলকিস বেগম।

প্রতিবেশী রুবেল হোসেন বলেন, “এক পরিবারের তিনজনকে এত কম সময়ে হারিয়ে আমরা সবাই নির্বাক। পুরো গ্রাম শোকে পাথর হয়ে আছে।”

জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, “মা-মেয়ে দুজনই শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। তাদের ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।”

একসঙ্গে তিন মৃত্যু এই গ্রামে দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে—বলে জানান স্বজনরা।