২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে তিনি এই যুক্তি তুলে ধরছেন।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই শুনানি শুরু হয়।

এর আগের দিন (সোমবার) থেকে শুরু হওয়া যুক্তিতর্কে আইনজীবী আমির হোসেন দাবি করেন, প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে আনা অভিযোগে গুরুতর ত্রুটি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনি কাঠামো, একাত্তরের পটভূমি, আওয়ামী লীগের শাসনামল, শাপলা চত্বরের ঘটনার প্রসঙ্গ এবং সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত তার যুক্তিতর্ক চললেও তা শেষ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল দুপুর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখে।

এর আগে, ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে মামলার প্রসিকিউশনপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। ওই সময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানান।

একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।

প্রসিকিউশন তাদের যুক্তিতর্কে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দেয় এবং এসব কর্মকাণ্ডকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে।

মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তিন দফা জেরা করেছেন আমির হোসেন। এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়। মামলার অন্যতম অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তার দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

প্রসিকিউশনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে:

  • তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা
  • জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা
  • শহীদদের তালিকা: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা

এই মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

পরবর্তী শুনানি ও সিদ্ধান্ত

দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্ক শেষ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী দিন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রেখেছে। মামলার পরবর্তী শুনানিতে আসামিপক্ষের যুক্তি শেষ হলে আদালত রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখবে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে—এ অভিযোগে এই মামলা দায়ের হয়, যার তদন্ত ও বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় আনা হয়।