বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে এবার উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান প্রকাশ পেয়েছে। গত চার বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে ইলিশ আহরণ কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ—যা মৎস্যসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতের জন্য এক অশনিসংকেত।
২২ দিনের মা ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞা শেষে বরিশাল বিভাগের নদীগুলোতে জাল ফেলছেন জেলেরা, কিন্তু আশানুরূপ মাছ মিলছে না। কেউ কেউ খালি হাতে ঘরে ফিরছেন। তাদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময়ই অবাধে ইলিশ শিকার হয়েছে, যার ফলেই এবার জালে মাছ পড়ছে না।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আহরিত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন ইলিশ, যেখানে গত বছর একই সময়ে ধরা পড়েছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৬৪৭ টন। অর্থাৎ এক বছরে কমেছে প্রায় ২৪ হাজার টন ইলিশ।
এ বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে আহরণ কমেছে যথাক্রমে ৩৩.২০ শতাংশ ও ৪৭.৩১ শতাংশ, মোট হ্রাসের হার প্রায় ৩৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ইলিশের প্রজনন ও টিকে থাকার জন্য বড় হুমকি।
নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক জেলে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ভোলার জেলে জালাল মিয়া বলেন, “নদীতে এখন মাছ নাই। নিষেধাজ্ঞার সময় মৌসুমি জেলেরা ইলিশ ধরে ফেলেছে।”
বরিশালের মাছ ব্যবসায়ী জুয়েল জানান, আগে নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে শত শত মণ ইলিশ আসত, এখন দশ মণও আসে না। তাই দামেরও পরিবর্তন হয়নি।
অন্যদিকে প্রশাসনের দাবি, এবারের অভিযান ছিল আগের যেকোনো বছরের তুলনায় কঠোর। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরিশাল বিভাগে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে ৩,৫৩১টি অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় ৮৯৩ জেলে কারাদণ্ড পান এবং জব্দ করা হয় ১ কোটি ৩৮ লাখ মিটার কারেন্ট জাল।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, অভিযান চালানোর সময় কিছু জেলেদের বাধা পেলেও আমরা কঠোর অবস্থানে ছিলাম। আশা করছি, কয়েকদিন পর নদীতে ইলিশ ফিরবে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাজেদুল হক বলেন, ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমে জেলেদের সম্পৃক্ত করা না গেলে সংকট বাড়বে। তাদের প্রণোদনা বাড়াতে হবে এবং সচেতন করতে হবে, যেন তারা বুঝতে পারেন আজ মা ইলিশ রক্ষা করলে কাল নদী ভরবে মাছের ঝাঁকে।