টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরতে নদীতে নামছেন পটুয়াখালীর জেলেরা। শেষ সময়ে জাল গোছানোসহ নৌযান মেরামতে ব্যস্ততা এখন জেলেপাড়ায়। দীর্ঘদিন পর ইলিশ ধরতে যেতে পারায় যেমন খুশি তারা, তেমনি চোখে মুখে ঋণ পরিশোধের চিন্তার ছাপ। 

সদর উপজেলার বড়বিঘাই ইউনিয়নের জেলে কালাম কবিরাজ বলেন, ‘গ্রামের মানষের ধাইরদা আমাগো ঋণ আনা। এই ২২ দিন নদীতে জাল বাইতে পারি নাই, কিন্তু কিস্তি ঠিকঠাক দেওয়া লাগছে, খুব কষ্টে আছি।’

উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের আরেক জেলে মো. জসিম বলেন, ‘সরকারের দেওয়া ২৫ কেজি চাউলে মোগো কিছু হয় না, অনেকে এক সেরের জায়গায় আধা সের রান্না কইররা খাইছি এতদিন। কিস্তি উডাইছি দুই লাখ আশি হাজার টাহা, কিন্তু এহন মাছ ধইররাও মনে হয় এই বছরে এত টাহা দিতে পারমু না।’

আরেক জেলে কুদ্দুস খলিফা বলেন, ‘সব জেলেগো লাখ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া, ঋণের টাকা পরিশোধের চিন্তায় আমাগো ঘুম হারাম হইয়া গেছে, তবুও নিষেধাজ্ঞা মানছি। নদীতে জাল ফালাই নাই। অবরোধ  শেষ এখন আমরা খুশি।’

গত ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপর নিষেধাজ্ঞা মেনে পটুয়াখালীর আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ পায়রা, তেঁতুলিয়া ও আগুনমুখা নদীর পাড়ে নৌকা নোঙর করেন জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় জাল ও নৌকা মেরামত করে মাছ ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের পূর্বে ৬৯ হাজার ৪৩ জন জেলেকে ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন মা-ইলিশ রক্ষায় ১৪৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এ পর্যন্ত ১১১ অসাধু জেলেকে গ্রেপ্তারসহ বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, সরকার নিবন্ধিত ঋণদান সংস্থা ও এনজিও ছাড়া জেলেদের স্থানীয় পর্যায়ে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে আমরা নিরুৎসাহিত করি। কারণ নিষেধাজ্ঞার পূর্বে  আমাদের জেলা প্রশাসনের সাথে মিটিং হয়, তখন বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিওকে আমরা এই ২২ দিনে জেলেদের কাছ থেকে কিস্তি নিতে অনুরোধ করি। তাই তারা কিস্তি নেন না। কিন্তু গ্রাম্য মাছের গদি বা স্থানীয় সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে আমরা ইন্টেরিম সরকারকে অনুরোধ করেছি জেলেদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে  ঋণদানের ব্যবস্থা গ্রহণের। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে আশা করি জেলেদের এ সকল সমস্যা থাকবে না। 

পটুয়াখালী জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮০ হাজার ২০ জন। মধ্যরাত থেকেই পায়রা, তেঁতুলিয়া ও আগুনমুখা নদীসহ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাবেন জেলেরা।