সরকার কাঁচা পাট রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করলেও দেশের বাজারে কাঁচা পাটের অভাব প্রকট রূপ ধারণ করেছে। পাটকল মালিকরা বলছেন, কাঁচামালের সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধের পথে চলে গেছে, যা শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। মজুতদারদের দৌরাত্ম্যের কারণে পাটের সঠিক সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কাঁচা পাটের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে সরকার রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করলেও বাজারের অস্থিরতা কমেনি। পাট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ৩,৪০০ থেকে ৩,৭০০ টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,৩০০ থেকে ৪,৫০০ টাকায়। এ কারণে পাটকল মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) চেয়ারম্যান তপস প্রামাণিক বলেন, “অনেকে বাজার থেকে পাট সংগ্রহ করে মজুত করে রেখেছেন, যার কারণে প্রকৃত মিল মালিকরা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাচ্ছেন না। ফলে পাটশিল্প সংকটে পড়েছে। যদি এই অবস্থা বজায় থাকে, অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। এটি দেশের জন্য বড় আঘাত।”

বিজেএসএ ও বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) উভয় সংগঠনই দাবি করছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত কাঁচা পাট রপ্তানিতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।

বিজেএসএর সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদ মিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান দাম বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে, পাটের দাম ২০২১ সালের রেকর্ড ৬,২০০ টাকা প্রতি মণ ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ অংশ হারিয়েছিল। দাম বাড়লে ক্রেতারা সস্তা বিকল্পের দিকে ঝুঁকবে, যা দেশের পাটশিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।”

খুলনার এক পাটকল মালিক জানান, “অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নামে আলাদা লাইসেন্স নিয়ে পাট মজুত করছেন, যদিও আইন অনুযায়ী এক মাসে এক হাজার মণের বেশি পাট মজুত রাখা যাবেনা। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না এবং লাখ লাখ মণ পাট গুদামে জমা হয়েছে।”

বিজেএমএর চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, “পাটখাত টিকিয়ে রাখতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও দুর্নীতি দমন জরুরি। প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো আলাদা ‘জুট কমিশন’ গঠন এবং আধুনিক তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করতে হবে। ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে কৃষক ও শিল্প মালিক উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব।”

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১১৬ কোটি ডলার, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কমে ৮২০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে এসেছে। এই অবনতির ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের বড় একটি উৎস সংকটাপন্ন হবে।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করে বলছেন, দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাটখাত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়তে বাধ্য হবে।