উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে চলমান ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করার জন্য মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, এল-ফাশের শহরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো সাম্প্রতিক গণহত্যা কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না এবং মুসলিম বিশ্বকে আর নীরব থাকা উচিত নয়।
সোমবার (৩ নভেম্বর) ইস্তাম্বুলে মুসলিম দেশগুলোর জোট ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) অর্থনৈতিক সম্মেলনে প্রতিনিধি সভায় অংশ নিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এই কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন। তুরস্ক বর্তমানে ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে।
এরদোয়ান তার বক্তব্যে বলেন, “সুদানে রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করার সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিঃসন্দেহে ইসলামী বিশ্বের ওপরই বর্তায়। মুসলমান হিসেবে আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে হবে, অন্যদের কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত নয়।”
তিনি সুদানের জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি মুসলিম বিশ্বকে সুদানের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘাত চলছে। এই সংঘাতে তুরস্ক সুদানি সেনাবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, ১৮ মাসের অবরোধ শেষে আরএসএফ যোদ্ধারা কৌশলগত শহর এল-ফাশের থেকে সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করার পর সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সহিংসতায় কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে একটি হাসপাতালেই ৪৬০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ শহরটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি এল-ফাশের শহরে বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আটকা পড়েছেন এবং সেখানে নির্বিচারে হত্যা, যৌন সহিংসতা, লুটপাট ও ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সুদানের এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কয়েক ১০ হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা বিশ্বের বৃহত্তম বাস্তুচ্যুতি ও ক্ষুধা সংকটে পরিণত হয়েছে। এরদোয়ানের এই আহ্বান মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে সুদান সংকট নিরসনে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিল।
ইএফ/