ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রস্তুতকৃত একটি শান্তি প্রস্তাবকে 'অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য' বলে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে কিয়েভ। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধিদলের বৈঠকের ঠিক পরই বিষয়টি সামনে আসে। ইউক্রেন প্রস্তাবটিকে তাদের মিত্রদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করার একটি 'উসকানি' হিসেবে দেখছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৮ দফার এই শান্তি প্রস্তাবে এমন কিছু শর্ত রয়েছে যা ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর ক্রেমলিন বহুবার দাবি করেছিল। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিরিল দিমিত্রিয়েভ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সমর্থনে এই পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই প্রস্তাব তৈরির সময় ইউক্রেনকে কোনোভাবেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ইউক্রেনীয় সংসদ সদস্য অলেক্সান্দর মেরেজকো এটিকে আলোচনায় বসার কোনো ইঙ্গিত নয় বরং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য পুতিনের একটি কৌশল বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এই বিতর্কিত পরিকল্পনার কিছু শর্ত ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ওপর চরম আঘাত হানতে পারে:ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া: ইউক্রেনকে বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাস অঞ্চলের উত্তরাংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে। সেনা ও অস্ত্রের হ্রাস: ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে এবং দূরপাল্লার সব অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। বিদেশি সেনা প্রত্যাহার: ইউক্রেনের মাটিতে কোনো বিদেশি সেনা মোতায়েন করা যাবে না, যার ফলে সম্ভাব্য শান্তিরক্ষী বাহিনীর ব্যবস্থাও বাতিল হয়ে যাবে। ভাষাগত দাবি: রুশ ভাষা এবং রুশ অর্থডক্স চার্চকে ইউক্রেনে আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দিতে হবে যা ক্রেমলিনের দীর্ঘদিনের দাবি। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা পরিষ্কার জানিয়েছেন, এই দলিল কার্যত ইউক্রেনের আত্মসমর্পণের সমতুল্য এবং এটি তাদের সার্বভৌমত্বের সমাপ্তি ঘটাবে।
জেলেনস্কি যখন তার নিজ দলের সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগ ও চিফ অব স্টাফকে বরখাস্তের দাবি নিয়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির মুখে, ঠিক তখনই হোয়াইট হাউসের এই নতুন চাপ সৃষ্টি হলো। পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের এই অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং পোল্যান্ড এই বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, যেকোনো স্থায়ী ও ন্যায্য সমাধানের জন্য ইউক্রেন ও ইউরোপের সমর্থন প্রয়োজন। তারা মনে করিয়ে দেয়, এই যুদ্ধে একজন হামলাকারী ও একজন ভুক্তভোগী রয়েছে। যুক্তরাজ্যও দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার কেবল ইউক্রেনীয় জনগণেরই রয়েছে।
ইএফ/