ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো প্রকার সম্পর্ক বা সহযোগিতা সম্ভব নয়। তিনি এই অঞ্চলের রাজনীতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপ এবং সামরিক ঘাঁটির উপস্থিতিরও তীব্র বিরোধিতা করেছেন।

১৯৭৯ সালে মার্কিন দূতাবাস দখলের বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (৩ নভেম্বর) তেহরানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এই কঠোর বার্তা দেন। এই সময় ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধে নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

খামেনি বলেন, “আমেরিকানরা মাঝে মাঝে বলে যে তারা ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায়। তবে যতক্ষণ না তারা (যুক্তরাষ্ট্র) জায়নবাদী শাসনের প্রতি সমর্থন সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে, এই অঞ্চল (মধ্যপ্রাচ্য) থেকে তাদের সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার করে এবং এই অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা সম্ভব নয়।”

এই মন্তব্য মূলত গত অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যের জবাবে এলো। ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, তেহরান প্রস্তুত হলেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তুত এবং “ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার জন্য আমরা দরজা উন্মুক্ত রয়েছে।”

খামেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শ্রেষ্ঠত্ববাদী’ মানসিকতার জন্য অভিযুক্ত করে বলেন, এমন দেশগুলো নিজেদের এতটাই বড় ভাবতে শুরু করে যে, তারা অন্য জাতির গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থে হস্তক্ষেপ করে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার দাবি করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে খামেনি বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো দেশের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও, এর একমাত্র সমাধান হলো নিজেদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী হওয়া। তিনি ইরান সরকারকে শক্তির সঙ্গে নিজস্ব কাজ করতে আহ্বান জানান।

এদিকে, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ইরান ‘তাড়াহুড়ো করছে না’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি পারস্পরিক স্বার্থ ও সমান মর্যাদার ভিত্তিতে কথা বলতে চায়, তাহলে ইরান পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শূন্যে নামিয়ে আনা, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুতে সীমা আরোপ এবং আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতি তেহরানের সমর্থন বন্ধ করার মতো শর্তগুলোকে ‘অযৌক্তিক ও অন্যায্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইএফ/