রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির পর রুশ অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় তেল পরিশোধন প্রতিষ্ঠান এইচপিসিএল-মিত্তাল এনার্জি লিমিটেড (এইচএমইএল)। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা আপাতত রুশ তেল আমদানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
এইচএমইএল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ভারতের সরকার ও জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল) ও শিল্পপতি লক্ষ্মী নিবাস মিত্তালের মালিকানাধীন আর্সেলরমিত্তালের যৌথ উদ্যোগে গঠিত এইচএমইএল দীর্ঘদিন ধরে রুশ তেলের অন্যতম ক্রেতা ছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পরিস্থিতি বদলে যায়।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, রুশ তেল কেনার মাধ্যমে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক জোগান বাড়াচ্ছে। এর জের ধরে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে তলানিতে ঠেলে দেয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে রুশ তেল আমদানি কমাতে রাজি হয়েছেন। তবে নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
এদিকে, ভারতের বেসরকারি খাতের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজও জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নতুন নিষেধাজ্ঞা খতিয়ে দেখছে। কোম্পানির মুখপাত্র জানান, আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্দেশনা অনুসরণ করব এবং ভারতের পক্ষ থেকে যেকোনো সরকারি নির্দেশ পেলেই তা কার্যকর করব।
নতুন ইইউ নীতিতে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতেও সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তবে রিলায়েন্স দাবি করেছে, তাদের বহুমুখী তেল সংগ্রহ কৌশল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহের স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।
রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থাকা ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল আমদানিকারক দেশ। দেশটির জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশই বিদেশি উৎস থেকে পূরণ হয়। ২০২২ সালে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সুযোগে রাশিয়ার কাছ থেকে বিশেষ ছাড়ে তেল কিনতে শুরু করেছিল নয়াদিল্লি, যা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের বড় কারণ হয়ে উঠেছে।