গাজার নাসের হাসপাতালের একমাত্র ফরেনসিক কক্ষে এখন কাজ চলছে সীমাহীন চাপে। সেখানে নেই ঠান্ডা সংরক্ষণাগার, নেই আধুনিক ডিএনএ পরীক্ষার সুযোগ। অথচ তাদের সামনে আসছে ভয়াবহ সব দেহ কেউ উলঙ্গ, কেউ অন্তর্বাসে, কারও হাত-পা বাঁধা অবস্থায়।

গত ১১ দিনে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজায় ফেরত দিয়েছে ১৯৫ ফিলিস্তিনির মরদেহ, বিনিময়ে গাজা থেকে ফেরত গেছে ১৩ ইসরায়েলি জিম্মির দেহ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ফেরত আসা অনেক দেহেই নির্যাতন ও শারীরিক আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। কারও হাত বাঁধা, কারও গলায় দড়ি বা কাপড়ের ফিতা দেখা গেছে।

নাসের হাসপাতালের ফরেনসিক ইউনিটের প্রধান ডা. আহমেদ ধেইর বলেন,“আমাদের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হিমঘরের জায়গার অভাব। দেহগুলো জমাট অবস্থায় আসে। গলতে সময় লাগে কয়েক দিন, ফলে আমরা মৌলিক পরীক্ষা করতেও পারি না।”

বিবিসির তদন্তে দেখা গেছে, অনেক দেহের কবজি, পায়ের গোড়ালি ও চোখের চারপাশে গভীর দাগ রয়েছে। ফরেনসিক টিমের সদস্য ডা. আলা আল-আস্তাল বলেন,“বাঁধন এত শক্ত ছিল যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে টিস্যু নষ্ট হয়েছে। কিছু দেহে ফাঁসের মতো দাগও দেখা গেছে।”

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এসব চিহ্ন নির্দেশ করে বন্দিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট প্রফেসর মাইকেল পোলানেন বলেন,“এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক ফরেনসিক জরুরি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার একমাত্র উপায় হলো পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত।”

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ফেরত দেওয়া সব দেহই ‘গাজার যোদ্ধাদের’, এবং তারা কোনও ধরনের নির্যাতন করেনি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দফতর থেকে বলা হয়, এসব প্রতিবেদন ইসরায়েলবিরোধী প্রচারণার অংশ।

অন্যদিকে, গাজার নিখোঁজদের পরিবার মরদেহ শনাক্তের আশায় হাসপাতালের বাইরে ভিড় করছেন। এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ জনের দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। জায়গার অভাবে ৫৪টি অজ্ঞাত দেহ ইতোমধ্যে কবর দেওয়া হয়েছে।

হুয়াইদা হামাদ নামের এক নারী বলেন,“যদি ডিএনএ পরীক্ষা থাকত, অন্তত জানতাম— আমার ছেলেটি কোথায়। এখন শুধু অনুমানই আমাদের একমাত্র ভরসা।”

ইএফ/