বিশ্বের সবচেয়ে বড় হালাল পণ্য ও সেবার প্রদর্শনী মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস (মিহাস) ২০২৫–এ অংশ নিয়েছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইচবি লিমিটেড। দেশীয় পণ্যের মান ও উপস্থাপনা দেখে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোসাম্মত শাহানারা মনিকা এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মহাপরিচালক–১ বেবী রাণী কর্মকার।
১৭ সেপ্টেম্বর সকালে প্রদর্শনীস্থলে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন উদ্বোধনকালে তারা বলেন, বাংলাদেশের হালাল কসমেটিকস শিল্পকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করার ক্ষেত্রে রিমার্ক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
দেশের প্রথম হালাল সার্টিফায়েড স্কিন কেয়ার ও কসমেটিকস প্রস্তুতকারক হিসেবে রিমার্ক এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ১০০ বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল হালাল ইন্ডাস্ট্রিতে সরাসরি অংশ নিয়েছে।
রিমার্কের পরিচিত ব্র্যান্ডসমূহ লিলি, নিওর, সিওডিল, হারল্যান, স্কিনমিন্ট, অরিক্স, ক্যাভোটিন, একনল, ডার্মাইউসহ হালাল সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত প্রায় দুই শতাধিক পণ্য প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
মিহাসে চতুর্থবারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর মোট ১২টি বুথ স্থান পেয়েছে, যেখানে খাদ্য, জামদানি, হস্তশিল্প, পাটজাত, সিরামিক, লেদার ও স্কিন কেয়ার সামগ্রীর পাশাপাশি পর্যটন খাতও উপস্থাপিত হচ্ছে।
রিমার্কের আইবিইউ (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিট)–এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাশেদুল ইসলাম বলেন, “উদ্বোধনী দিনেই অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা আমাদের পণ্যে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছেন। আশা করছি, এখান থেকে রপ্তানির বড় সুযোগ তৈরি হবে।”
তিনি আরও জানান, রিমার্ক ইতোমধ্যে সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া ও আজারবাইজানে কার্যক্রম চালু করেছে। এছাড়া থাইল্যান্ডে বাংলাদেশে তৈরি কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। রাশেদুল ইসলাম বলেন,“হালাল কসমেটিকস ব্যবহার এখন শুধু মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, নিরাপদ ও নৈতিক হওয়ায় এটি অমুসলিমদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্ববাজারে হালাল পণ্যের প্রবৃদ্ধি প্রতি বছর প্রায় ৮%। এই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্ববাজারে বিস্তৃত হতে চাই।”
মালয়েশিয়ার বাণিজ্য উন্নয়ন করপোরেশন (ম্যাট্রেড) জানিয়েছে, এবারের প্রদর্শনীতে ৮০ দেশের ১,০১৯টি কোম্পানি অংশ নিয়েছে, যেখানে বুথের সংখ্যা ২,৩৮০। আয়োজকরা আশা করছেন প্রায় ৪৫ হাজার দর্শনার্থী উপস্থিত থাকবেন। প্রদর্শনীর পাশাপাশি থাকছে স্পেশাল পারচেজিং মিশন (আইএনএসপি), নলেজ হাব সেমিনার, বিজনেস ডায়ালগ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
হালাল খাদ্য ও পানীয়, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ইসলামিক ফাইন্যান্স, ফ্যাশন, ব্যক্তিগত যত্ন, কসমেটিকস থেকে শুরু করে মুসলিম-বান্ধব পর্যটন সবকিছু নিয়েই আয়োজনটি একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে রূপ নিয়েছে।
রিমার্কের অংশগ্রহণ শুধু একটি কোম্পানির প্রচারণা নয়, বরং বাংলাদেশের উৎপাদনশীল খাতের সুনাম ও আস্থাকে বৈশ্বিক বাজারে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হালাল ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশ যদি ব্র্যান্ডিং ও মান ধরে রাখতে পারে, তবে ভবিষ্যতে এটি দেশের অন্যতম শক্তিশালী রপ্তানি খাত হয়ে উঠতে পারে।