গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির পরও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখনো লাখো মানুষ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মরিয়া হয়ে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সতর্ক করেছে—অঞ্চলটির প্রায় অর্ধেক জনগণ মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে, আর শিশুদের পুষ্টিহীনতা নতুন রেকর্ড গড়ছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, চলমান অবরোধ ও সীমান্তে সহায়তা আটকে যাওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। মানবিক সহায়তার বেশিরভাগই এখনো গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে স্থানীয় বাজারগুলোতে খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তর (OCHA) জানিয়েছে, গাজার প্রায় ২২ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ১১ লাখ মানুষ জরুরি খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন গড়ে মাত্র একবেলা খাবার পাচ্ছে অধিকাংশ পরিবার। অনেকে শুকনো রুটি ও নোনা পানি খেয়ে দিন পার করছেন।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র আরিফ হুসেইন বলেন, “গাজায় এখনকার দৃশ্য ভয়াবহ। যুদ্ধবিরতি হলেও ক্ষুধার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ থামেনি।” তিনি আরও যোগ করেন, “খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম গাজায় নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে না দিলে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে।”

এদিকে, মিশরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কিছু ট্রাক প্রবেশ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, প্রতি দিন অন্তত ৫০০ ট্রাক প্রয়োজন, কিন্তু প্রবেশ করতে পারছে সর্বোচ্চ ৮০–৯০টি।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া গৃহহীন নারী সামাহ ইউসুফ বলেন, “আমার দুই সন্তান তিন দিন ধরে ভাত দেখেনি। যুদ্ধের ভয় শেষ হলেও ক্ষুধার ভয় এখন আরও বড়।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, অবরোধ তুলে মানবিক করিডর উন্মুক্ত না করা পর্যন্ত গাজা কার্যত ‘ক্ষুধার খাঁচায় বন্দি এক নগরী’ হয়ে থাকবে।

ইএফ/