অফিসের ব্যস্ততা, রাত জাগা কিংবা সারাদিনের ক্লান্তি চেহারায় ছাপ ফেলে। আয়নায় তাকালেই চোখে-মুখে ক্লান্তভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তবে মজার বিষয় হল- শুধু পোশাকের রং বেছে নিলেই অনেক সময় সেই ক্লান্তি ঢেকে দেওয়া যায়।
এ সময়ে আলোচিত ‘ডোপামিন ড্রেসিং’- এরকমই একটি ধারণা। অর্থাৎ, এমন রংয়ের পোশাক বেছে নেওয়া যা পরলেই মন ভালো হয়ে যায়, চেহারা উজ্জ্বল দেখায়, আর ক্লান্তি কম মনে হয়।
হলুদ
হলুদকে বলা হয় রোদ্রের রং।
দেশি ফ্যাশন হাউজ বিবিয়ানার প্রধান ও ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ লিপি খন্দকার বলেন, “হলুদ মানুষের মনে সৃজনশীলতা, উচ্ছ্বাস আর আশাবাদ তৈরি করে।”
অনেক গবেষণায়ও দেখা গেছে, এই রং স্নায়ুকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং শরীরে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে, যা শক্তি বাড়ায়।
উজ্জ্বল ত্বকে হালকা হলুদ মানায়, আর শ্যামলা বা গাঢ় ত্বকে সরিষা হলুদের টোন খুব মানানসই।
বাদামি
বাদামিকে অনেকে ম্লান রং ভেবে এড়িয়ে যান। তবে বাদামি হল মাটির রং, যা মানুষের মধ্যে স্থিরতা, শান্তি আর নিরাপত্তার অনুভূতি জাগায়।
ক্লান্ত লাগলে এই রং শরীর ও মনের অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে। একেবারে সাদামাটা না দেখাতে বাদামির সঙ্গে বারগান্ডি (ওয়াইন লাল বা গাঢ় লালচে-বেগুনি) বা অন্য উজ্জ্বল রং মেলানো যেতে পারে।
লাল
লাল এমন একটি রং যা মুহূর্তেই নজর কাড়ে। এটি শক্তি, আত্মবিশ্বাস ও উদ্দীপনার প্রতীক। ক্লান্ত অবস্থায় লাল রং শরীরে নতুন উদ্যম জাগায়। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অব ডারহম’য়ের করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিযোগিতামূলক কাজে লাল কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে।
২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়ার ‘কার্টেন ইউনিভার্সিটি’র ‘স্কুল অফ বিল্ট এনভায়রনমেন্ট’য়ের করা আরেকটি গবেষণায় বলা হয়- লাল রং হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস বাড়িয়ে শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
তবে পুরো পোশাক লাল না পরে চাইলে শুধু একটি পোশাকের একটি অংশ বা লাল লিপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
বার্গান্ডি বা বেগুনি
যদি লালকে বেশি শক্তিশালী মনে হয়, তবে তার বিকল্প হতে পারে বার্গান্ডি।
এটি আসলে লালের গাঢ় শেইড, যেখানে বেগুনি ও বাদামি আভা থাকে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘স্টাইলিস্ট’ ড্যানিয়েল ও কনেল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটা লালের মতোই দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তবে এতে উষ্ণতা বেশি থাকে। ক্লান্ত থাকলে এটি আত্মবিশ্বাস জোগায়, তবে বাড়াবাড়ি মনে হয় না। তাই বার্গান্ডি রংয়ের একটি টপস, ফতুয়া বা কামিজের সঙ্গে নিরপেক্ষ রংয়ের প্যান্ট বা জিনস মানানসই।”
গোলাপি
গোলাপি রং অনেকসময় তারুণ্যের প্রতীক মনে হয়। মার্কিন ফ্যাশন স্টাইলিস্ট ও ‘মারমেইড ওয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়া পুখালস্কাইয়া রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “ফিউশা’ বা ‘হট পিংক’ হলে নাটকীয়তা আসে, আবার ‘মিলেনিয়াল পিংক’ বা ‘বাবলগাম পিংক’ হলে তা হয় হালকা ও প্রাণবন্ত। এই রংয়ে থাকে মিষ্টি, উচ্ছ্বসিত ভাব।”
ফিউশা রংয়ের একটি মিডি বা ম্যাক্সি ড্রেসের সাথে মেটালিক হিল জুতা পরলে যে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত হবে।
“আবার অফিসে হালকা গোলাপি টপস, শার্ট বা ফতুয়ার সঙ্গে জিন্স পরে নেওয়া যায়” বলেন লিপি খন্দকার।
নীল
নীল মানেই শান্তি আর আস্থা। তবে নীলের গাঢ় ও উজ্জ্বল শেইড, একদিকে শান্তি দেয় আবার সতর্ক ও প্রাণবন্তও করে তোলে।
এই রং নেভি ব্লু’র চেয়ে উজ্জ্বল, আবার আকাশি নীলের মতোও হালকা নয়। এতে সুষম উজ্জ্বলতা পাওয়া যায়।
গাঢ় ও উজ্জ্বল নীল ব্লাউজের সাথে হালকা নীল শাড়ি বা নীল টপস ও ট্রাউজারের সঙ্গে সাদা বা মেটালিক অ্যাকসেসরিজ মানানসই।
অফ-হোয়াইট
অফ-হোয়াইট বা হালকা সাদা রং মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে এবং সতেজতা আনে।
এই রং আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে পরিষ্কার ও নতুন এক অনুভূতি দেয়, যা ক্লান্ত চেহারাকে প্রাণবন্ত করে।
“অফ-হোয়াইট পোশাকের সঙ্গে বারগান্ডি বা বাদামি রং মিশিয়ে পরলে লুক আরও ভারসাম্যপূর্ণ হয়”- বলেন ও’কনেল।
সতেজ সবুজ
লেবুজাতীয় বা বসন্তের সবুজ সবসময়ই সতেজতার প্রতীক। নতুন পাতার মতো এ রং জীবনীশক্তি জাগায়।
গাঢ় সবুজ, যেমন- জলপাই বা গাঢ় সবুজ শান্ত ভাব দেয়। আবার ‘লেমন গ্রিন’ বা উজ্জ্বল সবুজ উচ্ছ্বাস আনে। সাদা প্যান্টের সঙ্গে উজ্জ্বল সবুজ টপস অথবা লেমন গ্রিন মিডিড্রেস বাদামি স্যান্ডেলের সঙ্গে মানানসই।