দেশের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা চলমান কর্মবিরতির কারণে শিক্ষাপঞ্জি তলানিতে নেমেছে। এ অবস্থা থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আজ (১ ডিসেম্বর) থেকে প্রাথমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। একই সঙ্গে মাধ্যমিক স্তরের চলমান বার্ষিক পরীক্ষা এবং নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা।

প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি তিন দফা – বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যা সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। মাধ্যমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবি – ৯ম গ্রেডে এন্ট্রি, ক্যাডারভুক্তি, টাইমস্কেল, পদোন্নতি ও বকেয়া আর্থিক সুবিধা। শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন, বহু বছর ধরে দাবি জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তব পদক্ষেপ হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, চলমান কর্মবিরতি ‘সরকারি চাকরি আইন’ ও ‘সরকারি কর্মচারী বিধিমালা’র পরিপন্থি। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বার্ষিক পরীক্ষা যথাসময়ে আয়োজন করতে প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি পে-কমিশনে প্রক্রিয়াধীন এবং অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২৮–৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। শিক্ষকরা যদি দায়িত্বে শৈথিল্য দেখান বা পরীক্ষা না নেন, তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে।

অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন যে, বছরের পুরো প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় মানসিক চাপে পড়ছেন। ঢাকার অভিভাবক তাহমিনা তারান্নুম বলেন, “দাবি থাকতেই পারে, কিন্তু বছরের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন বন্ধ করা শিক্ষার্থীর প্রতি অন্যায়।” অন্য অভিভাবক জহিরুল ইসলাম যোগ করেন, “শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক, কিন্তু শিক্ষার্থীর শিক্ষা পিছিয়ে না পড়া উচিত।”

মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, “আমরা শিক্ষকদের দাবির গুরুত্ব বুঝি, তবে শিক্ষার্থীর স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। প্রত্যেক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে, শিক্ষার্থীরা তাদের প্রস্তুতির সুফল পাবেন। আমরা আশা করি শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম সচল রাখবেন।”

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপঞ্জি স্থিতিশীল করতে সরকারের দ্রুত ও যৌক্তিক পদক্ষেপের প্রয়োজন। শিক্ষার্থীর স্বার্থ রক্ষা, পরীক্ষার সঠিক সময়সূচি বজায় রাখা এবং শিক্ষক-সরকার সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।