রংপুর চিড়িয়াখানায় শিশুদের বিনোদনের জন্য রাখা ট্রেনের চাপায় এক শিশুর (৩) মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। চারপাশ খোলা রেখে ট্রেন চালানোর কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ শিশুটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি। শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে থেকেও তার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ শনিবার দুপুরে চিড়িয়াখানার শিশুপার্কের উত্তর পাশে দোলনায় খেলছিল শিশুটি। এ সময় ট্রেনটি লাইনে চলছিল। হঠাৎ শিশুটি ট্রেনের সামনে দৌড়ে গেলে ট্রেনের চাকা তার গলার ওপর দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ছায়েদা খাতুন বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়। দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে শিশু সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়। তবে বিভাগে পৌঁছানোর আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়। পরে সম্ভবত মৃত্যুসনদ ছাড়াই অভিভাবকেরা লাশ নিয়ে যান।

হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মাহবুব হোসেন বলেন, শিশুটি জরুরি বিভাগ থেকে শিশু সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। তবে ভর্তি না হওয়ায় তার কোনো তথ্য রেকর্ডে নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, শিশুটিকে হাসপাতালে আনার সময় চিড়িয়াখানার ঠিকাদারের লোকজনও সঙ্গে ছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁরা দ্রুত শিশুটির লাশ ও অভিভাবককে সরিয়ে নেন।

আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে রংপুর চিড়িয়াখানার শিশুপার্কে গিয়ে দেখা যায়, কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এখলাছুর রহমানসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য পার্কের ইজারাদার সোহরাব হোসেনের সঙ্গে কথা বলছেন।

এসআই এখলাছুর রহমান বলেন, ইজারাদারের লোকজন জানিয়েছেন, শিশুটি ট্রেনে চাপা পড়েছে বা ধাক্কা লেগেছে। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার বিষয়টি স্পষ্ট বলতে পারত। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিশুপার্কের ইজারাদার সোহরাব হোসেন বলেন, প্রতিদিনের নিয়মে ট্রেন চলে। তাঁরা টিকিট দেওয়ার সময় বলে দেন, প্রত্যেক বাচ্চাকে সাবধানে রাখতে। অভিভাবকের ভুলে শিশুটি মারা গেছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে অরক্ষিতভাবে ট্রেন চালানোয় তাঁদের গাফিলতির বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

রংপুর চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ওমর ফারুক এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সতর্কতা ব্যবস্থা ছাড়া ট্রেনটি চালাতে ইজারাদারকে নিষেধ করা হয়েছে।

রংপুরের আইনজীবী পলাশ কান্তি নাগ বলেন, এটি অবহেলাজনিত মৃত্যু ও ফৌজদারি অপরাধ। ইজারাদার ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।