ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই রায়কে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ দেশজুড়ে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করলেও দলটির কোনো নেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। বরং গত দু'দিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগের এই প্রকাশ্য অনুপস্থিতি ও গোপন নাশকতার বিপরীতে রাজপথে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বুধবার রাত থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে জামায়াত নেতা-কর্মীরা সক্রিয়। বুধবার রাতে গুলশানে আওয়ামী লীগের নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ঢাকা-১৭ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডা. এস এম খালিদুজ্জামান নেতৃত্ব দেন। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রামপুরা, পল্টন, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট ড. হেলাল স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন, "৫ আগস্ট আওয়ামী লীগকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে জনগণ উদারতার পরিচয় দিয়েছে, কিন্তু এবার আর উদারতা দেখানো যাবে না। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেখানেই জ্বালাও-পোড়াও এবং নৈরাজ্যের চেষ্টা করবে, তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে।"
অন্যদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরও আওয়ামী লীগের নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীর ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ঢাকা কলেজ থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এই সমাবেশে জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে কঠোর বক্তব্য দেওয়া হয়। ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই ঐক্যের মতো অন্যান্য ইসলামী দল ও গণঅভ্যুত্থানের শরিকরাও মাঠে সক্রিয় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নাশকতার মধ্যে রয়েছে: বুধবার রাতে তেজগাঁও রেলস্টেশনের আউট লাইনে থাকা একটি পরিত্যক্ত ট্রেনের বগিতে আগুন, একই সন্ধ্যায় ধোলাইপাড় এলাকায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ।
তবে, এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অনেকটাই নীরব ভূমিকা পালন করছে। দলের পক্ষ থেকে মাঠে থাকার সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না আসায় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয়। যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা মন্তব্য করেছেন, "পার্টি বাসায় চুপচাপ থাকতে বলছে, ওদের তো (জামাত-এনসিপি) অনেক লোক; ওরাই থাকুক, হাসনাত নাকি একাই যথেষ্ট। ওরাই এখন সামলাক।" এই নীরবতা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের পথে একটি কৌশলগত প্রশ্ন তৈরি করেছে।
সারাদেশে যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ইএফ/