দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে একসময় বিশ্বের সেরা শহর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল রাজশাহী। তবে বর্তমানে নির্মল বায়ুর শহরটি নানা কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। বৃক্ষ নিধন, জলাশয় ভরাট ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে বাতাসের মান ভয়ঙ্কর হারে খারাপ হচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বায়ুমান রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে, স্কোর ১৬৭। খুলনা ১৫৭, রংপুর ১৩৭, বরিশাল ১১৪, ময়মনসিংহ ১১৩, সিলেট ৮২ এবং চট্টগ্রামে ৭৩। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ১৫১–২০০ স্কোরের মধ্যে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও যুক্তরাজ্যের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী সেই সময় বাতাসে ক্ষতিকর ক্ষুদ্র ধূলিকণা কমানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষে ছিল। ২০১৪ সালের ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে ২০১৬ সালে কমে দাঁড়ায় ৬৩.৯ মাইক্রোগ্রাম। ফাইন পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম ২.৫) এর উপস্থিতি কমানোতে রাজশাহী সর্বাধিক সফল হয়।
বর্তমানে শহরের বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হলো অব্যবস্থাপনা, বৃক্ষ নিধন, জলাশয় ভরাট, শিল্প কলকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণকাজে উৎপন্ন ধুলা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পিএম ২.৫ কণা ফুসফুস ও রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
আইকিউএয়ার নগরবাসীকে সতর্ক করেছে—বাইরে বের হলে মাস্ক পরা, জানালা বন্ধ রাখা, অস্বাস্থ্যকর এলাকায় দীর্ঘ সময় অবস্থান এড়িয়ে চলা ও বাইরে ব্যায়াম না করার পরামর্শ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (ইপিআইসি) এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স–২০২৫ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৫.৫ বছর কমে যাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজশাহী একসময় দূষণমুক্ত শহর হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হলেও আজ তার নাম পরিচয় ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণের সঙ্গে যুক্ত। নগরবাসী ও কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া শহরের স্বাস্থ্যঝুঁকি কাটানো সম্ভব হবে না।