আজ ১ ডিসেম্বর শুরু হলো মহান বিজয়ের মাস। বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরব, বেদনা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মহিমায় ভরপুর ডিসেম্বর বাঙালির অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অবিচ্ছেদ্যভাবে। ১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে এই ডিসেম্বরেই পূরণ হয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম।
১৬ ডিসেম্বর আসে চূড়ান্ত বিজয়ের দিন। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে নতুন দেশ বাংলাদেশ। জাতি পায় নিজের পতাকা, নিজের ভূখণ্ড আর ভাষার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদের পূর্ণ মর্যাদা। এক দীর্ঘ সংগ্রামের পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পায় সফল পরিণতি।
তবে এই মাস শুধু উল্লাসের নয়; গভীর বেদনা ও শোকও বহন করে। কারণ স্বাধীনতার বিনিময়ে বাঙালিকে দিতে হয়েছে লাখো প্রাণ, মায়ের কোলে সন্তানহারা আহাজারি, অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমহানি এবং দেশের মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ডিসেম্বরের শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর পর্যন্ত—বিশেষ করে ১০–১৪ ডিসেম্বর—স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা নির্বিচারে নিহত হন। বিশ্বের ইতিহাসে এমন নৃশংস বুদ্ধিজীবী হত্যা খুব কমই দেখা গেছে।
ডিসেম্বরের শুরুতেই ১৯৭১-এর যুদ্ধপরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনী সবদিক থেকে চাপে পড়ে। আকাশ, জল ও স্থলপথে সাঁড়াশি আক্রমণে শত্রুবাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে দ্রুত। চারদিকে বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর, ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় এক মহিমান্বিত বিজয়ের মুহূর্তে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
মহান বিজয়ের এই মাস তাই উদযাপন, আত্মচিন্তা এবং শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মাস। ডিসেম্বর আমাদের মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার মূল্য এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধের অঙ্গীকার।