জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জুবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডে নতুন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আটক এক ছাত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রেমঘটিত বিরোধের সূত্রে হত্যার ক্লু মিলেছে বলে জানিয়েছে বংশাল থানা পুলিশ।

রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আরমানিটোলার পানির পাম্প গলির একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় জুবায়েদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, ওই ভবনের একটি বাসায় এক কলেজছাত্রীকে তিনি নিয়মিত পড়াতেন।

প্রেমঘটিত সম্পর্কই হত্যার কারণ:
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ওই ছাত্রীর সঙ্গে মাহির রহমান নামে এক কলেজছাত্রের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত এক বছর ধরে ছাত্রীটিকে টিউশনি করাতেন জুবায়েদ। পড়ানোর সুবাদে ছাত্রীটি জুবায়েদকে পছন্দ করতে শুরু করেন, যা মাহির মেনে নিতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দুইজনকে দেখা গেছে—এর মধ্যে একজন মাহির রহমান বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তাদের গ্রেপ্তারে একাধিক টিম কাজ করছে।
ঘটনার আগে জুবায়েদ তার অবস্থান ‘লাইভ লোকেশন’ আকারে ছাত্রীটিকে পাঠিয়েছিলেন। সহপাঠীদের ধারণা, ওই ছাত্রী হয়তো হত্যাকারীদের অবস্থান জানাতে সাহায্য করেছেন। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রীটি দাবি করেছেন,
“স্যারকে শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম, কত দূরে আছেন। তখন উনি নিজেই লোকেশন পাঠান।”


এদিকে ঘটনার পরও এখনো কোনো মামলা হয়নি। নিহতের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, “আমরা ওই ছাত্রী, তার বাবা-মাসহ পাঁচজনের নামে মামলা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওসি বলেছেন, মেয়ের বাবা-মায়ের নাম দিলে মামলা নাকি হালকা হয়ে যাবে। তবুও আমরা তাদের নাম দিয়েই মামলা দিতে চাই। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।”

বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “যাদের নামে মামলা দিতে চায়, আমরা তা নেব। তবে তাদের পরামর্শ দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে।”


ঘটনার প্রতিবাদে রোববার রাতেই বংশাল থানার সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন। রাত ১১টার দিকে পুলিশ ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয় এবং দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে এখনো পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

নিহতের পরিচয়:
জুবায়েদ আহমেদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন।

গত এক বছর ধরে তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ওই বাসায় ছাত্রীটিকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন। ছাত্রীটি ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ একাধিক দিক খতিয়ে দেখছে। তবে প্রাথমিকভাবে প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করছে তদন্ত কর্মকর্তারা। নিহত জুবায়েদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।