ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন যে, তাদের সংগঠনের মূল আয়ের উৎস হলো এর জনশক্তির (সদস্যদের) ব্যক্তিগত দান ও আর্থিক সহায়তা। সভাপতি থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিট পর্যায়ের একজন কর্মী পর্যন্ত প্রত্যেক সদস্যই তাদের সাধ্য অনুযায়ী সংগঠনকে নিয়মিত অর্থ প্রদান করে থাকে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজশাহী কলেজ মাঠে অনার্স প্রথম বর্ষ (২০২৪-২৫ সেশন) ও উচ্চ মাধ্যমিকের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে আয়োজিত 'ক্যারিয়ার গাইডলাইন নবীনবরণ' শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সংগঠনের টিকে থাকার কৌশল ব্যাখ্যা করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদের যদিও নিজস্ব কোনো বড় আয় থাকে না, তবুও তাদের মধ্যে অল্প অল্প করে সঞ্চয় ও দানের যে অভ্যাস তৈরি করা হয়, সেটিই ছাত্রশিবিরকে এতো বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছে এবং সময়ের সাথে সাথে শক্তিশালী করেছে।
তিনি কর্মীদের মধ্যে দানের মানসিকতা তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরে বলেন, ছোটবেলা থেকেই সামান্য অর্থ সঞ্চয়ের অভ্যাস তাদের মধ্যে গড়ে তোলা হয়। যেমন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় জেদ করে নেওয়া পাঁচ বা দশ টাকা থেকে দুই টাকা সঞ্চয় করে ভালো কাজে ব্যয় করার মতো অভ্যাস থেকেই কর্মীদের মাঝে সংগঠনের প্রতি আর্থিক দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। এই আন্তরিকতা ও উৎসাহই প্রতিটি সদস্যকে সংগঠনের প্রতি আর্থিকভাবে যুক্ত রাখে।
ছাত্রশিবির সভাপতি আরও জানান, ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৪৮ বছরের পথ অতিক্রম করেছে এই সংগঠন। এই দীর্ঘ সময়ে ছাত্রশিবিরের অসংখ্য সাবেক সদস্য দেশের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী সেক্টরে তাদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, প্রশাসন দেশ ও বিদেশের কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনই নেই যেখানে ছাত্রশিবিরের কোনো সাবেক কর্মী নেই। এই সাবেক জনশক্তি নিয়মিতভাবে সংগঠনকে সমৃদ্ধ করার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকেন, যা সংগঠনের আয়ের একটি বড় উৎস।
আর্থিক স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, ছাত্রশিবিরের ব্যয়ের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয় এবং বরাদ্দকৃত অর্থের সম্পূর্ণটাই কার্যকরভাবে কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়। তিনি অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, অন্য সংগঠনগুলো কোনো উৎস থেকে দশ টাকা পেলে হয়তো তার মধ্যে দুই টাকা কার্যক্রমে ব্যবহার করে এবং বাকি আট টাকা বিভিন্ন পকেটে চলে যায়।
কিন্তু ছাত্রশিবিরের বাস্তবতা ভিন্ন। তিনি দাবি করেন, কোনো প্রোগ্রামের জন্য দশ টাকা বরাদ্দ করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় নিজের পকেট থেকে দুই টাকা অতিরিক্ত যোগ করে মোট বারো টাকা দিয়ে পুরোপুরি কার্যকরভাবে ব্যয় করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এই ধরনের আত্মত্যাগ, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা সংগঠনের কাজের ওপর 'বরকত' (ঐশ্বরিক কল্যাণ) নিয়ে আসে।
ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, আজকের নবীনবরণ আয়োজনও শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও কল্যাণকে কেন্দ্র করেই করা হয়েছে, যা তাদের দৃষ্টিতে প্রকৃত বিনিয়োগ। তিনি নেতাকর্মীদের এই নীতি ও চর্চা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
রাজশাহী কলেজ শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুমের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় ফাউন্ডেশন সম্পাদক আসাদুজ্জামান ভুইয়া, রাকসু ভিপি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি, রাজশাহী মহানগর সভাপতি মোহা. শামীম উদ্দীন এবং শিবিরের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার সম্পাদক মো. সিফাত উল আলম প্রমুখ।
ইএফ/