ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের নতুন ভর্তি নীতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে উচ্চমাধ্যমিকে পরিসংখ্যান পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বিজ্ঞান বা মানবিক যে কোনো শাখায় পরিসংখ্যানকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে নেওয়া শিক্ষার্থীরা এবার বাণিজ্য ইউনিটে আবেদন করার সুযোগ পাবেন না।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা গণিত অথবা পরিসংখ্যান দুটোর যেকোনো একটি বিষয়ে উত্তীর্ণ থাকলেই ঢাবির বাণিজ্য ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেতেন। কিন্তু এবার নীতিমালায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ২০০ নম্বরের গণিত (আবশ্যিক/ঐচ্ছিক) থাকতে হবে এবং ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে ৩.৫। ফলে উচ্চমাধ্যমিকে গণিতের বদলে পরিসংখ্যান নেওয়া শিক্ষার্থীরা সরাসরি এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ১২০টি আসন রয়েছে। কিন্তু নতুন শর্ত কার্যকর হওয়ায় পরিসংখ্যান পড়ুয়া অনেক যোগ্য শিক্ষার্থীই আবেদন করার যোগ্যতা পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে দেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ বা বাণিজ্য বিষয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে গণিত বাধ্যতামূলক নয়। ফার্মেসি বা বায়োসায়েন্সের মতো বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও গণিত ছাড়া ভর্তি হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিবর্তনকে অনেকেই আখ্যা দিচ্ছেন ‘অযৌক্তিক’ ও ‘বৈষম্যমূলক’ সিদ্ধান্ত হিসেবে।
ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, বিবিএতে পরিসংখ্যানের দুটি কোর্স রয়েছে। তাই যারা উচ্চমাধ্যমিকে পরিসংখ্যান পড়েছে, তাদের বাদ দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ পিয়াস হোসেনের ভাষায়, গণিত বা পরিসংখ্যান—দুটিই বিশ্লেষণধর্মী বিষয়। পরিসংখ্যান পড়েছে বলেই কেউ অযোগ্য হয়ে যায় এমন নয়। এই নীতি পরিষ্কারভাবেই বৈষম্য তৈরি করছে।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও গ ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আপত্তি পাওয়া গেলে অনুষদের ডিনের সঙ্গে আলোচনা করে পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। ফল প্রকাশের পর গত ২৯ অক্টোবর থেকে ঢাবির স্নাতক ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত।