নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থার মধ্যে ২০ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে মোট প্রায় ৩৪টি প্রস্তুতিমূলক প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। সভায় সেনা মোতায়েন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব মোকাবিলা এবং দুর্গম এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দিকেই গুরুত্বারোপ করা হয়।
সর্বোপরি প্রস্তাব ছিল নির্বাচন পূর্ববর্তী তিন দিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচন পরবর্তী চার দিন মিলিয়ে মোট আট দিনের জন্য সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন রাখা। প্রস্তাবিত সংখ্যার পরিধি ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সদস্য পর্যন্ত রাখা হয়েছে এবং তাদের প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ববন্টনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সভায় আলোচিত বিষয়গুলোর অন্যতম ছিল সশস্ত্র বাহিনী ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ হিসেবে থাকবে নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে; এছাড়াও সেনাবাহিনীর জন্য সরকার প্রদত্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সাথে বিচারিক ক্ষমতা সংযুক্ত করার বিষয়টিও আলোচনা হিসেবে উঠেছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার সময়ে এনটিএমসির ব্যবহৃত মনিটরিং অ্যাপটির সফলতাকে ভিত্তি করে ভোট সম্পর্কিত গুজব ও মিথ্যাচার রোধে একই ধরনের একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অ্যাপ মোবাইল-নির্ভর তত্ত্বাবধান, তথ্য যাচাই এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে সহায়তা করবে—কমিশন নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং করে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছানোর ওপরও জোর দিয়েছে। নির্বাচনী অপপ্রচারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা হলে তা ‘অপরাধ প্র্যাকটিস’ হিসেবে গণ্য করে আরপিওতে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) একটি নতুন ধারা সংযোজিত হয়েছে এই অপরাধে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল বিধানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে; পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায়ও মামলা হতে পারে।
পার্বত্য ও দুর্গম অঞ্চলে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তা পরিবহনের জন্য হেলিপ্যাড প্রস্তুত রাখার, স্থানীয় প্রশাসনকে হেলিপ্যাড সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ভোট-নিরাপত্তায় কার্যকর বাহিনী হিসেবে কোস্টগার্ড মোতায়েন করার কথাও বলা হয়েছে।ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা বাড়াতে প্রতিটি কেন্দ্রে অন্তত একটি করে ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তাব এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর চিহ্নিতকরণে কেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো, থানার দূরত্ব ও প্রভাবশালী পরিবারের নিকটতা বিবেচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনীয় মালামাল ও কর্মকর্তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার সুপারিশও তোলা হয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বাড়ানো, এক জায়গায় দীর্ঘদিন নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বদলির ব্যবস্থা, আমনিষদের সম্ভাবনা কমাতে আনসার সদস্য নিয়োগে কড়াকড়ি ও প্রশিক্ষিত আনসারের ডাটাবেস তৈরি—এসবই ছিল সভার গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে। আনসারদের মোট আট দিনের জন্য মোতায়েন রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
ইসি জানিয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন থেকে ভোটারের সংখ্যা বেড়ে মোট ১২ কোটি ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ১৭১ জন হয়েছে। এ নির্বাচন ৪২ হাজার ৬১৮টি ভোটকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে; মোট ভোটকক্ষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। রিটার্নিং অফিসার হিশেবে ৬৬ জন নিয়োগ করার পরামর্শ আছে এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগে ইসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহামেদ বলেন—আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনী নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি; তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বড় অংশেই বাজেট নির্ভর। জ্যেষ্ঠ কমিশনার রহমানেল মাছউদ বলেন, গুজব ছড়ানো একটি ‘গ্লোবাল প্রবলেম’ এবং এ ব্যাপারে আইনি ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়েছে; বিটিআরসি, পুলিশ ও সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থা অভিযুক্তদের শনাক্তকরণে কাজ করবে।
ইএফ/