ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রাজনীতিতে গতিশীলতা আসা বিএনপি এবার দলের ভেতরে ঐক্য সুসংহত করার কৌশল নিয়েছে। আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক শক্তিকে চাঙ্গা করতে এবং তৃণমূলের ভাঙন মেরামত করতে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অসদাচরণ বা মতবিরোধের অভিযোগে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বহিষ্কৃতদের মধ্যে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারাও ছিলেন। তবে এখন সেই কঠোর মনোভাব থেকে সরে এসে 'রাজনৈতিক বাস্তবতার স্বীকারোক্তি' স্বরূপ বহিষ্কৃতদের প্রতি নমনীয় হচ্ছে বিএনপি।

গত পাঁচ দিনে অন্তত ১৩ জন পদধারী নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বহিষ্কৃত নেতাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের প্রাথমিক সদস্যপদ পুনর্বহাল করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ দুই দশক ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং কুমিল্লার বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু-এর মতো হেভিওয়েট নেতাদেরও দলে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক ঢাকা মেইলকে বলেছেন, “বিএনপি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং অভিযোগ পাওয়ামাত্র ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন অনেকে নিজেদের ভুল শুধরে দলে কাজ করতে চান। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীদের অবশ্যই চাঙ্গা করবে।”

বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে মাঠে স্থবির হয়ে পড়া সাংগঠনিক কাঠামোকে আবারও সচল করার জন্যই এই পুনর্বহালের উদ্যোগ। দলের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও 'ভবিষ্যৎ টিকে থাকার কৌশলের অংশ' হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিন রাজপথে থাকা এবং ত্যাগী কর্মীদের নির্বাচনের আগে বাইরে রাখা দলের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই পুরোনো-নতুন নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব ঘোচানোই এখন বিএনপির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।

গত ২৭ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর স্বাক্ষরিত একাধিক বিজ্ঞপ্তিতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন জেলার নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, পিরোজপুর, নীলফামারী, রংপুর এবং হবিগঞ্জ জেলার একাধিক পদধারী নেতা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম মনে করেন, বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানো বিএনপির জন্য দ্বিমুখী বার্তা। একদিকে এটি ঐক্যের প্রতীক, অন্যদিকে এটি তৃণমূলের বিভেদও বাড়াতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষ্য, এই মুহূর্তে নির্বাচনে সবাইকে এক ছাতার নিচে আনা তাদের প্রধান অগ্রাধিকার।

ইএফ/