আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি তার প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, যেখানে জোটের শরিক দলগুলোর জন্য প্রায় ৪০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।

দলীয় সূত্র জানায়, এই তালিকা চূড়ান্ত করার আগে তিনটি জরিপের ফলাফলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এক মাস ধরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সারাদেশে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে নিবিড় পর্যালোচনা করে এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেন।

স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত ও আসন বণ্টন

স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ২৬০টি আসনের খসড়া তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে ২৩৭টি আসনের প্রার্থী নিয়ে ঐকমত্য হয়। বাকি ৬৩টি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, এই ৬৩টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে যদি আসন সমঝোতা হয়, তবে এই ছাড় দেওয়া আসনের সংখ্যায় পরিবর্তন আসতে পারে।

ncp-dhaka-20251021081119

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিশ্চিত করেছেন, দল এবার নতুন নীতি নিয়েছে: কোনো পরিবার থেকে দুজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে না। তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন, এবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরিবারের কোনো ছেলে-মেয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।”

গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীরা ও যারা বাদ পড়লেন

ঘোষিত তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ এবং বগুড়া-৭— এই তিনটি আসন থেকে লড়বেন বলে নিশ্চিত করেছেন মির্জা ফখরুল। তবে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে তিনি শেষ পর্যন্ত কয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।

তবে এই প্রাথমিক তালিকায় দলের বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ অনুপস্থিত। এদের মধ্যে রয়েছেন:

  • ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন খালি রাখা হয়েছে)।
  • ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
  • উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
  • সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (যিনি এর আগে কখনও নির্বাচনে অংশ নেননি)।

শরিকদের প্রতিক্রিয়া

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছেন, আসন ছাড় নিয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপির এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। তবে তারা তাদের পছন্দের আসনের একটি তালিকা বিএনপিকে জমা দিয়েছেন।

অন্যদিকে, এনসিপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "সব রাজনৈতিক দলের জন্য আমাদের দরজা খোলা আছে। আমরা তো তাদের স্বাগত জানিয়েছি, সবসময় তাদের পছন্দ করি এবং সহযোগিতা করতে চাই।"

বিএনপি মহাসচিব অবশ্য জানিয়েছেন, এটি কেবল প্রাথমিক তালিকা এবং স্থায়ী কমিটি মনে করলে যেকোনো সংশোধনী আসতে পারে।

ইএফ/