আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে বিএনপি প্রথম ধাপে ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তালিকা প্রকাশ করেন, যা সাড়ে তিন ঘণ্টার স্থায়ী কমিটির সভায় চূড়ান্ত করা হয়। এই তালিকায় পুরোনো অভিজ্ঞ নেতাদের পাশাপাশি ৮১ জন নতুন মুখকে জায়গা দেওয়া হয়েছে, তবে বাদ পড়েছেন দলের স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।

বিএনপি একাধিক ধাপে কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। প্রথমে দলের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক অবস্থান ও নির্বাচনী সক্ষমতা যাচাইয়ে তিন দফা জরিপ পরিচালনা করা হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির তিন নেতা—নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন—প্রায় এক মাস ধরে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

দলীয় সূত্র জানায়, প্রাথমিক ২৬০টি আসনের তালিকা নিয়ে আলোচনা হলেও, বাকি ২৩টি আসনে ঐকমত্য না হওয়ায় তা স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়া, বাকি ৬৩টি আসনের মধ্যে ৪০টি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দলের নতুন নীতির কারণে এবার এক পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এর ফলে বাদ পড়েছেন: স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী রুমানা মাহমুদ।

এছাড়াও, ঘোষিত ২৩৭ জনের তালিকায় নেই স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান। বাদ পড়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, এবং সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য জানিয়েছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা এবং দল মনে করলে যেকোনো কারণে যেকোনো সংশোধনী আসতে পারে।

তালিকা ঘোষণার পরই বেশ কিছু জেলায় মনোনয়নবঞ্চিতদের অনুসারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মেহেরপুর-২ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। কুষ্টিয়া-৩ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। চট্টগ্রামে নেতা আসলাম চৌধুরী এবং কুমিল্লা-৬ আসনে হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের সমর্থকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন অপর বঞ্চিত এক নেতার কর্মীরা।

এই ক্ষোভের মুখেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, ঘোষিত ২৩৭ আসনের তালিকা থেকে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। নতুন মুখের ভিড় ও কঠোর নীতি দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইএফ/