বাংলাদেশে কেউ সম্প্রদায় নন, সবাই নাগরিক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা কেউ সম্প্রদায় নই, বাংলাদেশের সবাই সিটিজেন। এ দেশের সবাই যার যার, নিজ নিজ ধর্ম চর্চা স্বাধীনভাবে করবে। হয়ত কেউ একেক ধর্মের অবলম্বন করতে পারেন বা ধর্মাবলম্বী হতে পারেন। নিজেরা যেন কেউ সম্প্রদায় হিসেবে পরিচয় না দিই, সিটিজেন হিসেবে পরিচয় দিই।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নীতি হচ্ছে– ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। সেই নিরাপত্তাটাই আমাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি, রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন কারণে গত ফ্যাসিবাদী শক্তি আপনাদেরকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, ভোটের বাক্স হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে… সেখান থেকে সবাইকে বেরিয়ে যেতে হবে।
‘যারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করবে, তাদেরকে জনগণ চিহ্নিত করে রাখবে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা ইদানীং লক্ষ্য করছি একটি গোষ্ঠী, একটি রাজনৈতিক দল ধর্মের ভিত্তিতে জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, অনৈক্য সৃষ্টি করতে চায়। আপনারা আমরা সবাই যেন সে ব্যাপারে সজাগ থাকি। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিন্ন রকমের ইস্যু সৃষ্টি করে এই দেশে সামনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আপনাদের সামনে স্পষ্ট একটি উচ্চারণ করি, বাংলাদেশে এখন নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে, বাংলাদেশের মানুষ ভোটের প্রচারে নেমে গিয়েছে, সব প্রার্থী যারা ইলেকশন করবেন বলে আশা করছেন সবাই গণসংযোগে নেমে গিয়েছেন। এখন যারাই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, যারা বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করবে, তাদেরকে এ দেশের জনগণ চিহ্নিত করবে।
তিনি বলেন, আমরা ১৬ বছর সংগ্রাম করেছি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য। যেই নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা এখনো হয়নি, যেই নির্বাচনের একটা সময়সীমা ঘোষণা হয়েছে, তারপর থেকে আমরা লক্ষ্য করলাম এই নির্বাচন যাতে বিলম্বিত হয় সেই প্রচেষ্টা চালু আছে কোনো কোনো মহল থেকে, এই নির্বাচন যাতে বাধাগ্রস্ত হয় সেই প্রচেষ্টাও চালু আছে কোনো কোনো মহল থেকে।
যারা এই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাইবে, তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা।
‘আপনাদের যৌক্তিক দাবি বিএনপির ইশতেহারে থাকবে’
হিন্দুদের বিভিন্ন দাবি বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনাদের কিছু দাবি-দাওয়া আমাদের সামনে আগেও দেওয়া হয়েছিল, আমরা এগুলো বিশ্লেষণ করেছি, আগেও আপনাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের সময় আপনাদের নেতাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আপনাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়াগুলো আমরা ধারণ করব।
তিনি বলেন, যেমন দেবোত্তর সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি, সংখ্যালঘু কমিশন এবং ফাউন্ডেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না, দেবোত্তর সম্পত্তি এবং অর্পিত সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে সেগুলো উদ্ধার করে মালিকানা ফিরিয়ে দিয়ে যায় কি না— এগুলো সবই সম্ভব। আমরা সেগুলো আমাদের ইশতেহারে ধারণ করব। এই ইশতেহার প্রণয়নের সময় আপনাদের সঙ্গে আবার আলোচনা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম-অমুসলিম, পাহাড়ি-সমতলের সব নাগরিকের সমন্বয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ সমন্বয়ের রাজনীতি করি এবং এই সমন্বয়ের রাজনীতিকে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুতরাং বিএনপি আমরা যারা করি, যারা বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি, আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিতে কোনো বিভক্তি চাই না। আমরা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে চাই না, কখনো চাইনি। আমরা বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে, ধর্মের ভিত্তিতে। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক, সাংবিধানিকভাবে আমরা সবাই সিটিজেন। সিটিজেনের সমস্ত অধিকার সাংবিধানিকভাবে যা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করাই হবে আমাদের লক্ষ্য। আমাদের সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য নাই আর্টিকেল ২৮ এবং সমস্ত ধর্মের উপাসনালয় কার্যক্রম এবং প্রচার স্বাধীনতা আছে আর্টিকেল ৪১। কিন্তু কার্যকরভাবে এটার প্রয়োগ আমরা নিশ্চিত করব।
‘বিএনপি আপনাদের পাশে থাকবে’
তিনি বলেন, আমি আপনাদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানাই এবং আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাদের দলের সব নেতাকর্মীকে আহ্বান জানাই যতদিন পর্যন্ত এই দুর্গোৎসব পরিচালিত হবে, দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে সারা বাংলাদেশে, আমাদের সব নেতাকর্মী এই অনুষ্ঠানকে পাহারা দেবে, নিরাপত্তা দেবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বক্তব্য দেন। পরে রাতে বনানীর পূজামণ্ডপও পরিদর্শন করেন সালাহউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপি নেতারা।