অন্তবর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল পেয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল পরিস্থিতি ঘোলা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

পরিস্থিতি ঘোলা না করার জন্য তিনি দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকালে ঢাকায় বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

তিনি বলেন, “জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে, যা আমরা সই করে এসেছি, বিএনপি এইসব অঙ্গীকার রক্ষা করবে, রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

“তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল পেয়ে যা ইচ্ছা তাই আদায় করে নিতে চায় কিংবা জনগণের দ্বারা বিএনপির বিজয় ঠেকাতে চায় বা কোনো অপকৌশল গ্রহণ করে, সেটি মনে হয় শেষ পর্যন্ত তাদের নিজেদের জন্যই রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বা দাঁড়াতে পারে কিনা, সে ব্যাপারে তাদের বোধহয় সতর্ক থাকা দরকার।”

২৫ দল স্বাক্ষরিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একটি আদেশ জারি করতে এবং সেই আদেশের ভিত্তিতে গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে জনগণের সম্মতি নেওয়ার সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

কিন্তু সেই গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপি চায় ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট হোক। অন্যদিকে জামায়াতসহ আট দল নভেম্বরেই গণভোটের দাবিতে আন্দোলন করছে।

গত ৩১ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন ওই সুপারিশ করলেও সরকার এখনো অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা করতে পারেনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ কে জারি করবে, কবে তা জারি হবে, সেই ফয়সালাও হয়নি।

মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দেওয়ার দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ করেছে।

সেদিন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, ‘আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে’ তা স্পষ্ট হবে।

তার পরদিন জামায়তসহ আট দল সরকারকে রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিল।

অপরদিকে বিএনপি নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন ও নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পক্ষে।

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “রাজপথের সঙ্গীদের প্রতি, সেই সঙ্গীদের প্রতি যারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করছেন বা করার চেষ্টা করছেন, দয়া করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না।”

৭ নভেম্বর ‘সিপাহী জনতার বিপ্লব’ উপলক্ষে আলোচনা সভা আয়োজনর প্রসঙ্গ ধরে তিনি ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ জিয়াউর রহমানকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্য আমাদের শক্তি, বিভাজন আমাদের দুর্বলতা।”

এরপরই তারেকে স্লোগান ধরেন, ‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ’।

আলোচনা সভায় জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

‘সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে

আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি রেখে আনুষ্ঠানিক প্রচার অভিযান শুরু করেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতির কথা বলেছে কমিশন। তার আগে দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে সংলাপে বসছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

তার আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে সেই প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

“তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে, নাকি দেশের গণতান্ত্রিক আমি জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনকেই অগ্রাধিকার তারা দেবে।”

তিনি বলেন, “রাজপথের আন্দোলনের সকল সঙ্গীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই… উত্তর কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে… ‘ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া’।

“সংবিধানে লেখা থাকলেই সবকিছু কী নিশ্চিত হয়ে যায়? হয়তো হয়ে যায় না। বাংলাদেশের ইতিহাস কিন্তু তাই বলে কম-বেশি। আসলে সবার আগে প্রয়োজন রাষ্ট্র রাজনীতি সম্পর্কে মানসিকতার পরিবর্তন, প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতার, প্রয়োজন গণতান্ত্রিক মানসিকতার, সর্বোপরি প্রয়োজন দেশপ্রেম এবং জাতীয় ঐক্য।”

‘জাতীয় ঐক্যে বিএনপির সর্বোচ্চ ছাড়’

তারেক বলেন, “দেশ এবং জনগণের গুরুত্ব স্বার্থে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জনসমর্থিত দল হওয়া সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার ব্যাপারে বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে।