জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত নবীন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সমন্বয় কমিটিতে হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে দলটি। সম্প্রতি নানা বিতর্কে থাকা ইমরান হোসেন বাবলু-কে এনসিপি'র চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সমন্বয় কমিটিতে ২ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী পদ দেওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে এনসিপি'র সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত ৩৭ সদস্যের ওই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে বাবলুর মতো বিতর্কিত ব্যক্তির পদপ্রাপ্তির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা এবং ভুক্তভোগী পরিবার।

জানা যায়, বাবলু কর্ণফুলী থানার জাফর হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান ও ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি চেক প্রতারণার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারেও গিয়েছিলেন তিনি। গত ১৩ অক্টোবর নগরীর খুলশী এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে জাফর আহমদকে হত্যার ঘটনায় বাবলুকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছিল।

এই পদপ্রাপ্তি নিয়ে এনসিপি'র অভ্যন্তরেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জোবাইরুল আলম মানিক গণমাধ্যমকে বলেন, “কমিটির বিষয়ে চট্টগ্রামের দায়িত্বশীলরা ভালো বলতে পারবেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার (ইমরান) বিরুদ্ধে এনসিপি অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।”

একই প্রসঙ্গে এনসিপি চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সুজা উদ্দিন বলেন, “কমিটি অনুমোদনের পর থেকে ইমরানের বিষয়ে অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নিহত জাফরের ছেলে মোহাম্মদ আবছার এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমার বাবাকে হত্যার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ পদে এসেছে। এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। নানা সময়ে ইমরান আমাদের হুমকি দিত। কমিটিতে স্থান পেয়ে এখন সে আরও বেপরোয়া হবে।”

অন্যদিকে, অভিযোগের বিষয়ে ইমরান হোসেন বাবলু নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার দাবি, “স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতারা ভূমি বিরোধের জেরে আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করেছে। চেক প্রতারণার মামলাগুলোও ষড়যন্ত্রমূলক।”

দেশের ক্লিন ইমেজের তরুণদের নিয়ে গঠিত একটি নতুন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে পদ দেওয়া, এনসিপি'র সাংগঠনিক স্বচ্ছতা ও নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আশ্বাস সত্ত্বেও, দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ইএফ/